Engineering knowledge

Breaking

Friday 16 June 2017

গ্রাউন্ড কি ও কেন এবং এর প্রকারভেদ?

গ্রাউন্ড কি ও কেন এবং এর প্রকারভেদ?
.
আমরা প্রায়শই ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক্স সার্কিট এ গ্রাউন্ড
চিহ্ন দেখতে পাই।
.
সার্কিট এ সাধারণত ৩ ধরণের গ্রাউন্ড সংযোগ ব্যবহার করা হয়ঃ
.
১. আর্থিং বা আর্থইন/আর্থ-লিংক
২. কমন গ্রাউন্ড
৩. সিগনাল গ্রাউন্ড
.
.
আর্থিং বা আর্থইন/আর্থ-লিংক
পাওয়ার সাপ্লাই গুলো ফিল্টারিং করা হয় বড়বড় ক্যাপাসিটর দিয়ে তা আমরা জানি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই ফিল্টারিং খুব কার্যকর হয়না বিশেষত এম্পলিফায়ার বা আরো কিছু সেন্সিটিভ সার্কিট গুলোতে। কারন এই ফিল্টারড ডিসি তে অল্প পরিমান এসি রিপল হিসাবে মিশে থাকে। তা হয়ত সাধারন সার্কিট এর জন্য অল্প, কিন্তু এম্পলিফায়ার দিয়ে এটি শত গুণ বিবর্ধিত হয় স্পিকারে খুব খারাপ ভাবে শোনায়। তখন এই নয়েজ এর জন্য গান শোনা যায় না। একে বলে রিপল বা হাম। এই রিপল কমাতে তখন গ্রাউন্ড এর সাহায্য নেয়া হয় যা কিনা সার্কিট এর (-) অথবা গ্রাউন্ড থেকে একটা তার আর্থিং বা আর্থইন করে দেয়া হয়। তার ফলে ঐ অতিরিক্ত এসি গ্রাউন্ড বা মাটিতে চলে যায় তাই শব্দও পরিষ্কার শোনা যায়।
.
আর্থিং কি ও আর্থিং কেন ব্যবহার হয়ঃ
.
বিদ্যুতায়িত হবার হাত থেকে বাঁচবার জন্যই মূলত আর্থিং ব্যবহার করাহয়। লক্ষ্য করলে দেখবেন যে ফ্রিজ,কম্পিউটার, বড় মনিটর ইত্যাদি ডিভাইসের বডি তে হাত দিলে কিছু শক (electric shock) করে। এটি যেন কখনো মাত্রা ছাড়িয়ে ক্ষতির কারক না হতে পারে সেজন্য আর্থিং ব্যবহার করা শ্রেয়।
আবার, উচ্চ ক্ষমতার ডিভাইস যা কিনা এসি মেইন লাইনে চলে সেগুলো কখনো যেন শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন না লাগে তার জন্যও আর্থিং বেশ ভূমিকা রাখে। যখনই শর্ট সার্কিট হয় তখনি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ আর্থিং এর মাধ্যমে গ্রাউন্ডে চলেযায় আপরদিকে ফিউজ, কাট আউট কিংবা সার্কিট ব্রেকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অতিরিক্ত ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।
আর্থিং না থাকলে শক খাওয়া খুব সহজ
.
#কমন_গ্রাউন্ডঃ
এই গ্রাউন্ডকে আবার কমন গ্রাউন্ড ও বলে। এজন্য যে, এই গ্রাউন্ড এর সাপেক্ষেই সার্কিট এর বিভিন্ন স্থানের ভোল্টেজ মাপা হয়। প্রাথমিক ভাবে কোন সমস্যা নির্ণয়ের জন্য বা সার্কিট ঠিক মত কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করবার জন্য। এছাড়াও বড় সিঙ্গেল সাপ্লাই ডায়াগ্রামে ছোট একটা পার্টস যেমনঃ ক্যাপাসিটর থেকে লম্বা লাইন টেনে (-v) তে সংযুক্ত করা অনেক ঝামেলার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তখন ডায়াগ্রামে কমন গ্রাউন্ড চিহ্ন দিয়ে সংক্ষেপে বুঝানো হয়। সকল কমন গ্রাউন্ড এর সংযোগ (-v) তে যাবে যদি না সে সার্কিট স্প্লিট সাপ্লাই বিশিষ্ট হয়ে থাকে এবং যদি না ডায়াগ্রামে বিশেষ কিছু উল্লেখ করা থাকে।
যেহেতু গ্রাউন্ডের সাপেক্ষে এটি কমন তাই এর অপর নাম কমন গ্রাউন্ড।
নয়ত সার্কিট কাজ করবে না। নিম্নের
এক্ষেত্রেসবগুলো কমন ground একসাথে যুক্ত থাকবে।কমন গ্রাউন্ড কে চেসিস গ্রাউন্ড ও বলে। চেসিস বলতে সাধারণত সার্কিট রাখবার বক্সকে বুঝায়। যাকিনা ব্যবহারকারি থেকে সার্কিট কে সুরক্ষা দেয় ও ব্যবহারকারীও বিদ্যুতায়িত হবার হাত থেকে বাঁচেন। এটি মেটাল কেসিং এর হলে বেশী ভালো কারণ এরফলে বাইরের নয়েজ যেমন ভেতরে ঢুকতে পারেনা তেমনি ভাবে ভেতরের নয়েজ ও বাইরে বের হতে পারে না। অনেকটা শিল্ড (Shield – বর্ম) এর মত কাজ করে। এই চেসিস কে কমন গ্রাউন্ডের সাথেই সংযুক্ত রাখাহয় (সাধারণত)।কারণঃ এরফলে নয়েজ দারুণ ভাবে হ্রাস পায়।
খুব সেন্সিটিভ সার্কিট যেমন টিভি এর আই, এফ (I.F) সেকশন কে দেখবেন পাতলা একটা মেটাল দিয়ে ঢেকে দেয়। এবং তারসাথে সংযুক্ত থাকে চেসিসের। মূলত এসি রিপল কমলেও এই সার্কিট গুলো এতই সেন্সিটিভ এবং জটিল যে সার্কিট এর আশেপাসে থাকা রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি ইন্টারফেয়ারেন্স (RFI) এই সার্কিট এর ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তা যাতে না হয় তাই ঐ সার্কিট গুলো ঢেকে দিয়ে কমন গ্রাউন্ড এর সাথে জুড়ে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য যে সাধারন সার্কিট গুলো তে কমন গ্রাউন্ড ই বেশি ব্যবহার করে।
.
#সিগনাল_গ্রাউন্ডঃ
সাধারণত এম্পলিফায়ারের ইনপুটে (যেকোনো এম্পলিফায়ারই হতে পারে যেমনঃ রেডিও এম্প, অডিও এম্প) সিগনাল দেয়াহয়। এবং এর খুব কাছেই থাকে একটি গ্রাউন্ড যার মাধ্যমে সার্কিট সম্পূর্ণ হতেপারে এবং সিগনাল আদান প্রদান হতেপারে। একেই মূলত সিগনাল গ্রাউন্ড বলে।
ধরুন আপনার কাছে একটি এম্পলিফায়ার আছে যার এম্পলিফাই করবার ক্ষমতা ১০০ গুণ। অর্থাৎ, এই এম্প এর ইনপুটে যদি ১ মিলি ভোল্ট দেয়াহয় তাহলে এর আউটপুটে ১০ ভোল্ট পাওয়া যাবে। এখন আমরা জানি যে সার্কিটের বিভিন্ন অংশের ভোল্টেজ ড্রপ হয়। তা খুবই নগন্য হলেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ এম্প সার্কিট গুলোর জন্য। কারণ সার্কিটের ভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত পাওয়ার সাপ্লাই গ্রাউন্ডের থেকে সিগনাল গ্রাউন্ড পয়েন্টে আসতে আসতে সেই ভোল্টেজ ড্রপ ০.০১ ভোল্ট হতে পারে। কিন্তু এটিই ১০০ গুণ বিবর্ধিত হয়ে উক্ত এম্পলিফায়ারের আউটপুটে ১ ভোল্ট পরিমাণে হয়ে যেতে পারে যার ফলে আউটপুটে অবাঞ্ছিত নয়েজের সৃষ্টি হয়।
.
#নোটঃ অবশ্যই সিগনাল গ্রাউন্ড কে পাওয়ার গ্রাউন্ড থেকে দূরে রাখবেন
.
#গ্রাউন্ড_লুপঃ
আমরা এতক্ষন গ্রাউন্ডের সুবিধা কি তা জানলাম। কিন্তু এই গ্রাউন্ডের কারণেই যে নয়েজ তৈরি হতে পারে তা এখন বলছি। বিশ্বাস না হলেও এটিই সত্যি। একে বলে গ্রাউন্ড লুপ । এরফলে এম্পলিফায়ারের হাম কমবার পরিবর্তে বেড়ে যায়।
মনেকরুন আপনার কাছে একটি প্রিএম্পলিফায়ার ও আলাদা একটি এম্পলিফায়ার সার্কিট আছে। আপনি করলেন কি নয়েজ কমানোর জন্য প্রিএম্পলিফায়ার এ একটি গ্রাউন্ড দিলেন আবার এম্পলিফায়ার সার্কিট কেও তাতেও আলাদা ভাবে গ্রাউন্ড দিলেন। এরপর এই প্রিএম্পলিফায়ার আর এম্পলিফায়ারের মাঝে সংযোগ দিলেন। আপনার যুক্তি ছিল প্রিএম্পলিফায়ার কে গ্রাউন্ড করলে নয়েজ কমবে। আবার আলাদা ভাবে যদি এম্পলিফায়ার কেও গ্রাউন্ড করি তাহলে কোনো নয়েজই থাকবে না! এখানেই ভুল করছেন। বরং এই ভিন্নভিন্ন গ্রাউন্ডের কারণে আরো নয়েজ বেড়ে যাবে। বস্তুতপক্ষে সম্পূর্ণ সার্কিটে গ্রাউন্ড একটিই ব্যবহার করতে হয়। ভিন্নভিন্ন গ্রাউন্ড ব্যবহার করলে তাতে লুপের সৃষ্টি হয়ে হিতে বিপরীত হয়।
.
গ্রাউন্ড লুপ এড়াতে সতর্কতাঃ
.
আগেই বলেছি সম্পূর্ন সার্কিটে একটিই গ্রাউন্ড ব্যবহার করা নিয়ম। অর্থাৎ, এই সকেট থেকে একটা গ্রাউন্ড নিলাম আবার অন্য সকেট থেকে আরেকটি গ্রাউন্ড নিলাম -এমন করা যাবে না। একান্তই নিতে হলে যে কোনো গ্রাউন্ড লিংক থেকে সার্কিটে খুব নিম্নমানের রেজিস্টর দ্বারা সংযুক্ত করতে হবে, যেমনঃ ৬ ওহম, ১০ ওহম প্রভৃতি।
প্রকৃতপক্ষে এই লুপ অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এবং বিভ্রান্তিকর ও বটে। এবং এটিনিয়ে লিখতে গেলে বিশাল অধ্যায় রচনা সম্ভব। এটি দূর করবার জন্য ভিন্নভিন্ন পন্থাও উল্লেখযোগ্য। সামনে হয়ত কোনো আসরে এনিয়ে বলবো।
কিভাবে বুঝবো আমার সার্কিটে গ্রাউন্ড কোনটি?
এই প্রশ্নটি নতুনদের জন্য খুবই স্বাভাবিক। আর তার উত্তর হচ্ছে- ভালোভাবে সার্কিট পর্যবেক্ষন করে বোঝা সম্ভব সার্কিটে কেমন গ্রাউন্ড ব্যবহার করা হয়েছে। সহজ কিছু টিপস হচ্ছে-
.
১। যদি এম্পলিফায়ার বা বিশেষ ধরনের সূক্ষ্ণ কিছু নাহয় তাহলে
কমন গ্রাউন্ড ব্যবহার করাই শ্রেয়
.
২। এম্পলিফায়ার এ নয়েজ খুব বেশী থাকলে এম্পলিফায়ার সার্কিটের গ্রাউন্ড থেকে একটি আর্থিং দেয়া শ্রেয়। একই সাথে এম্পলিফায়ার এর ফিল্টারিং বেশ ভালো ভাবে করতে হবে। প্রয়োজনে পাই ফিল্টার (Pi Filter) বা টি ফিল্টার (T Filter) ও ব্যবহার করা উচিৎ।
.
৩। সিগনাল গ্রাউন্ড কে চেনার সহজ উপায় হচ্ছে এম্প সার্কিট। অর্থাৎ আপনার সার্কিট যদি এম্পলিফায়ার হয় তাহলে এর ইনপুটে থাকা গ্রাউন্ড টি নির্ঘাত সিগনাল গ্রাউন্ড।
.
আশাকরি আমাদের এই লেখাটির মাধ্যমে গ্রাউন্ডিং এর ব্যাসিক কনসেপ্ট বুঝতে পেরেছেন। তবু কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে করবেন। আপনার শেয়ার কমেন্ট আমাদেরকে অনেক বেশী অনুপ্রাণিত করবে।
ধন্যবাদ।

No comments:

Post a Comment